বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করার উপায় হিসেবে কোম্পানিগুলির জন্য উপলভ্য বিভিন্ন ধরনের বিকল্পের মধ্যে ইক্যুইটি এবং অগ্রাধিকার শেয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প। স্টক বাজারে বিনিয়োগ করার সময় সঠিক প্রকারের শেয়ার নির্বাচন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইক্যুইটি এবং অগ্রাধিকার শেয়ার, তাদের নিজস্ব অধিকার, ঝুঁকি এবং পুরস্কারের সম্ভাবনা দিয়ে আপনার বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। আপনি একজন নিয়মিত বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিনিয়োগকারী হোন না কেন, ইক্যুইটি এবং অগ্রাধিকার স্টকের মধ্যে পার্থক্য বোঝা খুবই দরকার। এই প্রতিবেদনে তাদের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য, বিনিয়োগকারীদের জন্য তাদের প্রভাব এবং কৌশলগত বিবেচনাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যা এই বিকল্পগুলির মধ্যে থেকে কোম্পানিগুলিকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
ইক্যুইটি শেয়ার কী?
ইক্যুইটি শেয়ার একটি কোম্পানির মালিকানার প্রতিনিধিত্ব করে। ইক্যুইটি বিনিয়োগকারীরা হলেন কোম্পানির আসল মালিক। এই শেয়ারগুলি বিনিয়োগকারীদের ভোট দেওয়ার এবং কর্পোরেট সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করার অধিকার দেয়।
ইক্যুইটি শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির লাভ এবং ক্ষতিতে অংশগ্রহণ করেন, এবং তাদের রিটার্ন কোম্পানির কর্মকাণ্ড ও স্টকের মূল্যের ওঠানামার উপর নির্ভর করে। কোম্পানির বৃদ্ধি এবং সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা তাদের ইক্যুইটি শেয়ারের অধিক মূল্য উপভোগ করতে পারেন ।
তবে, লিকুইডেশনের ক্ষেত্রে ঋণদাতা এবং বন্ডহোল্ডারদের পরে সবার শেষে ইক্যুইটি শেয়ারহোল্ডাররা তাদের প্রাপ্য বুঝে পান।
ইক্যুইটি শেয়ারের প্রকারভেদ
ইক্যুইটি শেয়ারগুলি নিম্নলিখিত প্রকারের:
- সাধারণ শেয়ার: কোম্পানিগুলি দীর্ঘমেয়াদী মূলধনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার জন্য সাধারণ শেয়ার ইস্যু করে। সাধারণ শেয়ারগুলি শেয়ারহোল্ডারদের কোম্পানির সিদ্ধান্তগুলিতে ভোট দেওয়ার অধিকার দেয়।যেহেতু তাদের ডিভিডেন্ড এবং মূল্য কোম্পানির কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভর করে., তাই বিনিয়োগকারীরাদের জন্য ঝুঁকি এবং পুরস্কার দুটোই অধিক মাত্রায় থাকে।
- অগ্রাধিকার শেয়ার: এই শেয়ারগুলি শেয়ারহোল্ডারদের একটি নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড প্রদান করে। লিকুইডেশনের সময়, পছন্দের শেয়ারহোল্ডারদের কোম্পানির সম্পত্তির উপর বেশি দাবি (ক্লেম)থাকে।
- বোনাস শেয়ার: এগুলি বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের কোম্পানির নির্ধারিত আয় থেকে বিনামূল্যে ইস্যু করা হয়। কোম্পানির বাজার মূলধন এই বোনাস শেয়ারের ফলেবদলায় না।
- অধিকার ইস্যু: কোম্পানিগুলি নির্দিষ্ট গ্রাহকদের প্রো-রাটা ভিত্তিতে অধিকার শেয়ার ইস্যু করে। কোম্পানিগুলি অতিরিক্ত মূলধন সংগ্রহ করার প্রয়োজনে অধিকার শেয়ার ছাড়তে পারে। বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ারগুলি কোম্পানি থেকে বিশেষ হারে কিনতে পারেন।
- সোয়েট শেয়ার: কোম্পানির ডিরেক্টর এবং কর্মচারীরা কোম্পানিতে অবদানের জন্য সোয়েট শেয়ার পান। এই শেয়ারগুলি বিশেষ ছাড়যুক্ত হারে ইস্যু করা হয়।
- এমপ্লয়ি স্টক অপশন: ইএসওপি (ESOP) শেয়ার হল কোম্পানির ধরে রাখার কৌশলের (রিটেনশন স্ট্র্যাটেজির) অংশ। ভবিষ্যতের কোনও এক তারিখেরজন্য পূর্বনির্ধারিত মূল্যে কোম্পানির শেয়ার কেনার বিকল্প দেওয়া হয়ডিরেক্টর এবং কর্মচারীদের।
অগ্রাধিকার শেয়ার কী?
অগ্রাধিকার শেয়ার বা অগ্রাধিকার স্টক, হল এমন এক প্রকারের ইক্যুইটি মালিকানা যা উচ্চ হারে স্থির ডিভিডেন্ড প্রদান করে। অগ্রাধিকার স্টকগুলি মালিকদের কোম্পানির জীবনকাল জুড়ে কোম্পানির ডিভিডেন্ডের উপর একটি নির্দিষ্ট ক্লেম প্রদান করে।
অগ্রাধিকার শেয়ারের বৈশিষ্ট্য
- লাভের পরিমাণ নির্বিশেষে স্থির ডিভিডেন্ড দেওয়া হয়
- তাদের ডেট (debt) এবং ইক্যুইটি উভয় প্রকারের বৈশিষ্ট্য রয়েছে
- অগ্রাধিকার শেয়ারগুলি সাধারণত ভোট দেওয়ার অধিকার দেয় না
- লিকুইডিটির ক্ষেত্রে কোম্পানির সম্পদের উপর শেয়ারহোল্ডারদের দাবির অগ্রাধিকার (ক্লেম) রয়েছে
অগ্রাধিকার শেয়ারের প্রকারভেদ
- পরিবর্তনযোগ্য শেয়ার: পরিবর্তনযোগ্যঅগ্রাধিকার শেয়ার বিনিয়োগকারীদের এই শেয়ারের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক শেয়ারকে একটি নির্দিষ্ট তারিখের পরে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরিত করার অনুমতি দেয়।
- অপরিবর্তনযোগ্য শেয়ার: শেয়ারহোল্ডাররা অপরিবর্তনযোগ্য শেয়ারকে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরিত করতে পারবেন না।
- অংশগ্রহণকারী অগ্রাধিকার শেয়ার: এই স্টকগুলি শেয়ারহোল্ডারদের অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড গ্রহণ করার অনুমতি দেয় যদি কোম্পানির লাভ একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে।
- অ-অংশগ্রহণকারী অগ্রাধিকার শেয়ার: শেয়ারহোল্ডাররা একটি নির্দিষ্ট হারে ডিভিডেন্ড পান।
- কোম্পানি দ্বারা রিডিম বা ক্রয় যোগ্য শেয়ার: রিডিমযোগ্য শেয়ারগুলি এমন একটি ধারার সাথে আসে যেখানে কোম্পানি পূর্বনির্ধারিত তারিখে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে শেয়ারগুলি কেনার অফার দেয়। এটি শেয়ারহোল্ডারদের প্রস্থানের একটি বিকল্প প্রদান করে।
- কোম্পানি দ্বারা নন-রিডিমযোগ্য বা ক্রয় যোগ্য নয় এমন শেয়ার: এই শেয়ারগুলি কোম্পানি দ্বারা রিডিম বা ক্রয় করা যাবে না। বিনিয়োগকারীরা সেকেন্ডারি বাজারে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া পর্যন্ত এগুলি তাদের কাছে থাকে।
ইক্যুইটি এবং অগ্রাধিকার শেয়ারের মধ্যে পার্থক্য
নিম্নলিখিত টেবিলটি ইক্যুইটি এবং অগ্রাধিকার শেয়ারের মধ্যে পার্থক্যগুলি বর্ণনা করে:
প্যারামিটার | ইক্যুইটি শেয়ার | অগ্রাধিকার শেয়ার |
সংজ্ঞা | ইক্যুইটি শেয়ারগুলি কোম্পানির আংশিক মালিকানার প্রতিনিধিত্ব করে | তাদের কোম্পানির লাভ এবং সম্পদের উপর অগ্রাধিকার রয়েছে বা দাবি আছে |
রিটার্ন | ডিভিডেন্ড (স্থায়ী নয়) এবং মূলধনের মূল্যবৃদ্ধি | স্থায়ী লভ্যাংশ |
ডিভিডেন্ড পে-আউট | অগ্রাধিকার শেয়ারহোল্ডারদের পরে ডিভিডেন্ড দেওয়া হয় | ইক্যুইটি শেয়ারহোল্ডারদের আগে পছন্দের হারে শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দেওয়া হয় |
ডিভিডেন্ড রেট | স্থায়ী নয়; কোম্পানির কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভর করে | একটি নির্দিষ্ট হারে ডিভিডেন্ড দেওয়া হয় |
ভোট দেওয়ার অধিকার | ইক্যুইটি শেয়ারহোল্ডারদের ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে | অগ্রাধিকার শেয়ারহোল্ডারদের ভোট দেওয়ার অধিকার নেই |
লিকুইডিটি | অত্যন্ত লিকুইড | ইলিকুইড |
রিডেমশান | ইক্যুইটি শেয়ার কোম্পানি দ্বারা রিডিম বা ক্রয় যোগ্য নয় | কোম্পানি দ্বারা রিডিম বা ক্রয় যোগ্য |
ফাইন্যান্সিং | দীর্ঘমেয়াদী ফাইন্যান্সিং প্রয়োজনে ব্যবহৃত | স্বল্প থেকে মধ্য মেয়াদী ফাইন্যান্সিং |
রূপান্তরযোগ্যতা | রূপান্তরিত করা যাবে না | রূপান্তরযোগ্য এবং অ-রূপান্তরযোগ্য বিকল্পে আসে |
ডিভিডেন্ডের বকেয়া | ডিভিডেন্ডে কোনও বকেয়া নেই | কিছু ধরনের অগ্রাধিকার শেয়ার ডিভিডেন্ডের বকেয়ার জন্য যোগ্য |
কোম্পানির দায়বদ্ধতা | ইক্যুইটি শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দেওয়ার জন্য কোম্পানির কোনও দায়বদ্ধতা নেই | কোম্পানিকে অবশ্যই তার লাভের স্থিতি নির্বিশেষে ডিভিডেন্ড দিতে হবে |
বিনিয়োগকারীর প্রকারভেদ | উচ্চ-ঝুঁকিসম্পন্ন বিনিয়োগকারী | ঝুঁকি নিতে চান না এমন বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত |
দেউলিয়া | অগ্রাধিকার শেয়ারহোল্ডারদের পর ইক্যুইটি হোল্ডারদের তাদের প্রাপ্য দেওয়া হয় | দেউলিয়া হওয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানির সম্পদের উপর অগ্রাধিকার শেয়ারহোল্ডারদের দাবির অগ্রাধিকার রয়েছে |
শেষ কথা
ইক্যুইটি এবং অগ্রাধিকার শেয়ারগুলি বিভিন্ন উপায়ে শেয়ারহোল্ডার এবং কোম্পানিগুলিকে সুবিধা প্রদান করে। ঝুঁকি সহ্য করার ক্ষমতার উপর এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে, বিনিয়োগকারীরা ইক্যুইটি এবং অগ্রাধিকার স্টকের মধ্যে নির্বাচন করতে পারেন। যদি আপনি স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন, তাহলে আজই একটি ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলুন।
FAQs
ইক্যুইটি বিনিয়োগ কি একটি ভাল বিকল্প?
ইক্যুইটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে উচ্চতর রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি আপনার ভালোভাবে গবেষণা করা বিনিয়োগ পরিকল্পনা থাকে, তাহলে আপনি ইক্যুইটি শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগের উপর আপনার রিটার্ন বাড়াতে পারেন।
ইক্যুইটিতে কারা বিনিয়োগ করবেন?
দীর্ঘমেয়াদী মূলধন অ্যাপ্রিসিয়েশনের লক্ষ্য এবং উচ্চ ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা সহ বিনিয়োগকারীদের জন্য ইক্যুইটি বিনিয়োগ উপযুক্ত।
পছন্দের (প্রেফারেন্স) শেয়ারে কারা বিনিয়োগ করেন?
এই শেয়ারগুলি মাঝারি ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক বিনিয়োগকারী ও যারা দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে রয়েছেন, তাদের জন্য উপযুক্ত।
ইক্যুইটি এবং পছন্দের (প্রেফারেন্স) শেয়ারহোল্ডারদের জন্য রিটার্ন কীভাবে ভিন্ন হয়?
ইক্যুইটি শেয়ারের রিটার্ন কোম্পানির পারফর্মেন্সের উপর নির্ভর করে। তবে, কোম্পানির লাভ ছাড়াও শেয়ারহোল্ডাররা একটি নির্দিষ্ট হারে ডিভিডেন্ড পান।